করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) থেকে কার্যকর সুরক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে টিকার তৃতীয় তথা বুস্টার ডোজ নিতে হবে কিনা, এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলতি সপ্তাহে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
ব্র্যাডফোর্ড রয়্যাল ইনফার্মারির চিকিৎসক ড. জন রাইট সেই ট্রায়ালের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কিছু টিকা রয়েছে, যা একবার নেওয়ার পর সারাজীবন ধরে কাজ করে। যেমন- হেপাটাইটিস টিকা। আবার পোলিও অথবা টিটেনাসের মতো কিছু টিকার নিয়মিত বিরতিতে বুস্টার ডোজ নিতে হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে প্রতি বছর শীতে যেসব ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে, সেগুলোর জন্য টিকা তৈরি করা হয়।
কভিড-১৯ যদিও পৃথিবীতে অল্প কিছুদিন হলো এসেছে, কিন্তু এখনো বিজ্ঞানীদের জানা নেই যে, সেটি কতদিন থাকবে। টিকা নেওয়ার পরেও সেটির বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন কার্যকর থাকবে সেটিও নিশ্চিত নন তারা।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, অন্যান্য ফ্লু’র টিকার মতো, কভিডের ক্ষেত্রেও শীতের আগে সংক্রমণ এড়াতে আর নতুন ধরনের ভাইরাসের হামলা থেকে বাঁচতে প্রতিবছর বুস্টার টিকা হতে পারে।
‘কভ-বুস্ট’ নামের সর্বশেষ এই গবেষণায় এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্র্যাডফোর্ড প্রথমবারের মতো বিশ্বের কেউ তৃতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন।
ব্র্যাডফোর্ড রয়্যাল ইনফার্মারির অধ্যাপক অ্যালেক্স ব্রাউন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তৃতীয় ডোজের এই বুস্টার টিকা গ্রহণ করেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই তিনি কভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে আসছেন।
করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে বিশ্বে অনেক ধরনের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এই ট্রায়ালে এইরকম সাতটি টিকা প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালানো হবে। এগুলোর মধ্যে আছে- অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, নোভাভ্যাক্স এবং জনসন টিকা। কোনো কোনোটি অবশ্য অর্ধেক মাত্রায় প্রয়োগ করা হবে।
অধ্যাপক ব্রাউন বলেন, ‘মানুষজন হয়তো মনে করতে পারে যে, লকডাউন শেষ হয়ে গেলেই এই বিপদ থেকে মুক্তি, আসলে তা নয়। আপনাকে সবসময়েই সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। তখন এটি মহামারীর বদলে একটি সাধারণ রোগে পরিণত হবে।’
গবেষক অধ্যাপক দিনেশ সারালায়া বলছেন, এই গবেষণায় বেরিয়ে আসবে যে, কীভাবে কভিড একটি টিকা আরেকটি টিকার সঙ্গে কাজ করবে।
তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণকারীরা আগে যে টিকা পেয়েছেন, সেটি থেকে আলাদা একটি টিকা এখন দেওয়া হবে। এভাবে মিশ্রণ করার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো- এই ভয়াবহ ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকার কোন মিশ্রণটি আমাদের সুরক্ষা দিতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।’
গবেষণা শেষে বোঝা যাবে, সবাইকে বুস্টার ডোজ হিসেবে তৃতীয় টিকা নিতে হবে কিনা। সেটি নিতে হলে কোন টিকাটি বেশি সুরক্ষা দেবে।