স্মরণকালের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ খরায় ধুঁকছে ইউরোপ। খরার কবলে পড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে জার্মানির রাইন নদী, ব্যাহত হচ্ছে নৌচলাচল। লন্ডনের টেমস নদীর পানির উৎসও শুকিয়ে যাচ্ছে। স্পেন এবং ফ্রান্সেও তীব্র খরা দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এবছর বিগত ৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার কবলে পড়তে পারে ইউরোপ।
প্রতিবছর অক্টোবরের শেষের দিকে পানি কমতে থাকে জার্মানির রাইন নদীর। কিন্তু এবার তীব্র খরার কারণে অনেক আগেই আশঙ্কাজনক হারে পানি কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির নৌ-কর্তৃপক্ষ। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় বন্ধ হতে বসেছে পণ্যবাহী নৌযান ও ফেরি চলাচল। অস্বাভাবিক গরমে নদীর পানির তাপমাত্রাও অনেক বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশটির নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের কাছাকাছি রাইন নদীর তীরবর্তী কাউব শহরে পানির স্তর ৪০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে গেছে। খরার কারণে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত পরিবেশবিদরাও।
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত টেমস নদীর দৈর্ঘ্য ২১৫ মাইল। সাধারণত গ্রীষ্মকালে এর উৎসস্থল শুষ্ক থাকে। তবে এবার রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে টেমস নদীর উৎস অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শুকিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, গড় বৃষ্টির দিক থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসটি ছিল ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে শুষ্ক। তীব্র এ খরার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তীব্র খরার প্রভাব পড়েছে স্পেনের মালাগা শহরেও। গরমে শুকিয়ে গেছে নদীর পানি। মাঠঘাট ফেটে চৌচির হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবকে দায়ী করার পাশাপাশি দুর্বল কৃষি ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, খরার কারণে দাবানল সৃষ্টি হচ্ছে। পানির অভাবে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক সংকট তৈরি হচ্ছে। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আমরা সবাই পরিবেশের এ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তাই আমাদেরও বদলাতে হবে।
তীব্র দাবদাহে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফ্রান্সের পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ১৯৫৮ সালের পর এবারই প্রচণ্ড দাবদাহের কবলে পড়েছে ফ্রান্স। চলতি মাসের মাঝামাঝি এটি আরও তীব্র হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।