দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের বরাত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, করোনাকালে এবারের বাজেট গতানুগতিক বাজেট হওয়া উচিত নয় বরং ৬ মাসের জন্য অন্তর্বর্তী বাজেট করতে হবে। বিশেষ সময়ের এই বাজেটের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে করোনার প্রভাব মোকাবিলার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও দুর্ভোগ উপশম করা।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘বাজেট ভাবনা অর্থবছর ২০২১-২০২২’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে দরকার হবে সহায়ক নীতি। এ জন্য কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন, করোনার ভয়াবহতা না কমলে গতানুগতিক বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ৬ মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা।
২৪ দফা বাজেট ভাবনা তুলে ধরতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এবারের বাজেট হওয়া উচিত জীবন বাঁচানোর বাজেট, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি মোকাবিলার বাজেট। এবারের বাজেট হবে করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ ও অভিঘাত থেকে উত্তরণের বাজেট। বর্তমান বিরাজমান জটিল, সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো জীবন ও জীবিকার সমন্বয় সাধন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২৮ পৃষ্ঠার বাজেট ভাবনায় কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জিডিপির ৬-৭%, ‘দিন আনে দিন খান’ শ্রেণির মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাসের প্রণোদনা প্রদান, নিরপেক্ষভাবে দুস্থ উপকারভোগীর তালিকা প্রণয়ন করে ‘দরিদ্রজনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজের’ আওতায় আনার প্রস্তাব করেন বিএনপি মহাসচিব।
বাজেট প্রস্তাবনায় তিনি শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি ‘অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মেগা প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির সব কাহিনি আপনারা সবাই জানেন। দেখা গেছে যে, সরকার সাধারণ মানুষের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের চেয়ে মেগা প্রকল্প গ্রহণেই বেশি আগ্রহী। কালো টাকা সাদা করার সরকারি নীতির কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোভিডকালীন সময়ে এত কালো টাকা কারা আয় করেছে জাতি জানতে চায়? যদিও এরই মধ্যে সরকার দলীয় ও তাদের মদদপুষ্ট অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে পড়েছে। অপ্রদর্শিত আয়ের একটি বিরাট অংশ মানিলন্ডারিং হয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রেটিং প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। বছর প্রায় লাখ কোটি টাকার অধিক পাচার হয়। প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ। এ সময় ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও হরিলুটে ঋণখেলাপির চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রিয়াজ উদ্দিন নসু, আবদুস সালাম আজাদ, এবিএম আবদুস সাত্তার ও শায়রুল করিব খান।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.