অনলাইন ডেস্ক:
উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর দর সমন্বয়ে ‘রেট শিডিউল’ বা মূল্যতালিকা সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ডলারের দামের প্রভাবে নির্মাণসামগ্রীর দর বেড়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের পর কাজ শুরুর আগেই নির্মাণসামগ্রীর দর বেড়ে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়। তাই রেট শিডিউল সমন্বয় করতে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী ওই নির্দেশনা দেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন একনেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। সভা শেষে ব্রিফিংয়ে এসব বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সরকারি পর্যায়ে পণ্য ও সরঞ্জাম ক্রয়ের রেট শিডিউল কয়েক বছর পরপর সমন্বয় করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি সর্বশেষ সমন্বয়ের সময় দেশে ১ ডলারের দর ছিল ৮৭ টাকা; কিন্তু এখন তা প্রায় ১০৯ টাকা। ডলারের দর অনেক বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বাড়ছে প্রকল্পের। এ অবস্থায় রেট শিডিউল সমন্বয়ের নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে– উন্নয়ন প্রকল্পে অপচয় যাতে না হয় সে বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া, একই নামে এবং ধরনের প্রকল্প গ্রহণ না করা এবং একক মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়– এ রকম প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মাস্টারপ্ল্যান করা।
গতকাল একনেক সভায় ১৭ প্রকল্প অনুমোদন হয়। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এ অর্থের একটা বড় অংশ, অর্থাৎ ১২ হাজার ২০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব। ৫ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো দিচ্ছে ৫৮৫ কোটি টাকা। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়।
একনেক ভাইস চেয়ারম্যান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অনুমোদিত ১৭ প্রকল্প সভায় অনুমোদিত ১৭ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে– বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে এখন ৫ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রথমবার অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। অনুমোদন পাওয়া ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্মসিটির দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি নতুন। এ ছাড়া অনুমোদিত সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। জিনাই, ঘাঘট, বংশী এবং নাগদা নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধার প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। উলিপুর-চিলমারী সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি টাকা।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে বেসরকারি ভবনের রেজিলিয়েন্সির গুণগত মান বৃদ্ধিকরণ। পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৯৬ টাকা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জন্য রেকর্ড ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২৭৯ কোটি টাকা। বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৫৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ প্রকল্প, ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন, উড়িরচর-নোয়াখালী ক্রস ড্যাম নির্মাণে ৫৯৯ কোটি টাকা, সন্দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংরক্ষণে ৫৬২ কোটি টাকা, খাদ্যগুদাম নির্মাণে ৮১৪ কোটি টাকা ও আমার গ্রাম আমার শহর পাইলট প্রকল্পে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করা হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প সভায় অনুমোদন হয়।
