মানব ও অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে দেশটির আদালত। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাপুলকে কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছেন কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন পাপুল। শুধু তাই নয়, স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি। কুয়েতে আদম ব্যবসায় অনিয়ম এবং হাজার কোটি টাকার কারবারে অভিযুক্ত পাপুল গ্রেপ্তার হন। তাকে রিমান্ডেও নিয়েছে সে দেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।
গত ৭ জুন তাকে গ্রেপ্তার করে করেছে কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট সিআইডি। কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একজন সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে যাওয়া পাপুল বর্তমানে কুয়েতের একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে ধারণা করা হয়। গালফ নিউজের খবরে বলা হচ্ছে, পাঁচ বাংলাদেশির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। জানা যাচ্ছে, কুয়েতেই বিচার হবে এই বাংলাদেশি আইনপ্রণেতার। প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনায় পাপুলের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কী না?
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বেশ কিছু কারণে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে, যেমন: কোনো উপযুক্ত আদালত যদি তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেন; তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর যদি দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করেন; তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন; তিনি যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন; সংসদের অনুমতি ছাড়া তিনি যদি একটানা নব্বই বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন এবং সংবিধানের বহুল আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদের আলোকে তিনি যদি তার দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোট দেন।
দেখা যাচ্ছে, উপরোক্ত একটি কারণও কুয়েতে গ্রেপ্তার এমপি পাপুলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তার ক্ষেত্রে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে; প্রথমত যদি তিনি কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং সেটি যদি ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে দুই বছরের বেশি সাজা হয়, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ যাবে। এখন মুশকিল হলো কুয়েতের আইনে সাজাপ্রাপ্ত হলে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যের সদস্য পদ যাবে কী না- সেটি তর্কের বিষয়। আবার যদি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তাকে যদি শাস্তি দেওয়া হয় আর সেই শাস্তি যদি বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির আলোকে দুই বছরের বেশি পরিমাণ সাজা হয়, তাহলে সেই যুক্তিতে পাপুল সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। কিন্তু বিদেশে সাজাপ্রাপ্ত হলে কারো সংসদ সদস্য পদ যাবে কী না, সেটি বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ নেই।
এমপি পাপুলের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১৫ বছর জেল হতে পারে। কেননা কুয়েতের আইন অনুযায়ী অর্থ ও মানবপাচার বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.