কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সড়কেও।
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় নেই গণপরিবহন। কোথাও কোথাও দীর্ঘ সময়েও দেখা মিলছে না বাস। ফলে অফিসগামী কিংবা একান্ত প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে।
শুধু তাই নয়, সাতসকালেও অন্য সময় সড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও আজ ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদেরও দেখা নেই বলে জানিয়েছেন অনেকে।
শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন। পরদিন রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সারাদেশের আপামর জনসাধারণকে অলিতে-গলিতে, পাড়ায় পাড়ায় সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শনিবারের কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে রোববার সর্বাত্মকভাবে পালন করার কথা জানানো হয়।
দল ঘোষিত জমায়েত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা ঢাকার প্রতিটি পয়েন্টে শক্তভাবে অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছে। ফলে দুই পক্ষের কর্মসূচি ঘিরে বৈরী পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জনসাধারণের মধ্যে। তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
রোববার সকালের পরিস্থিতি অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরছেন। পাশাপাশি সড়কের ছবিও দেন তারা। এসব ছবিতে দেখা গেছে, মূল সড়কের অনেক জায়গায় মানুষ দীর্ঘ সময় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু বাসের দেখা নেই। ফলে কেউ হেঁটে, কেউ সিএনজি, রিকশা, মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কেউ আবার খরচ কমাতে শেয়ারে যাচ্ছেন।
গণপরিবহনের এমন সংকটে খরচও বেড়েছে। বাড্ডা থেকে নতুন বাজার অন্য সময় ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে যাতায়াত করতেন রেজা। কিন্তু রোববার অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সকালে বাড্ডা থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত এসেছি কোনো বাস দেখিনি। এমনকি নতুনবাজার পর্যন্ত আসা পর্যন্ত আমার রিকশাকে ওভারটেক করেও কোনো বাস যেতে দেখিনি। বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশায় এসেছি। আমার মতো অনেক মানুষ দুর্ভোগে পড়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন।’
সাভার থেকে ঢাকায় আসার পথে বাস না পাওয়ার কথা জানিয়ে জাহিদুল সৌরভ জানান, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই বললেই চলে। রাস্তা যদিও ফাঁকা এখনও। অফিসগামী লোকজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হয়নি তেমন।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে এয়ারপোর্ট সড়কের ফাঁকা ছবি দিয়ে সাদিয়া সিদ্দিকা জানান, রাস্তায় কোনো গাড়ি নাই! মেইন রোড দিয়ে অটোরিকশা চলছে।
আশরাফুল হক নামে একজন রাস্তায় গণপরিবহন সংকটের চিত্র তুলে ধরে ফেসবুকে লিখেছেন, বনশ্রী থেকে সকাল ৮টা ৬ মিনিটে রওনা হলাম। আগারগাঁও পৌঁছলাম ৮টা ২৮ মিনিটে। হাতিরঝিল-সাতরাস্তা-বিজয়সরণীর পথে একজনও পুলিশ পেলাম না। টিপু চৌধুরী নামে একজন ট্রাফিক পুলিশ না দেখার কথা জানিয়েছেন।
ফেসবুকে সড়কের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, মোটরসাইকেলে উত্তরা থেকে ধানমন্ডি আসলাম। রাস্তায় লোকাল বাস খুবই কম। এয়ারপোর্ট থেকে রাস্তার পাশে অনেক মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও ট্রফিক পুলিশ নাই।
সুত্র-ডিএম
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.