প্রবল বর্ষণ ও অব্যাহত নদীর পানি বৃদ্ধিতে সোমবার মাদারীপুরের ৪টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানির স্রোতের তীব্রতায় দ্রুত পানি প্রবেশ করেছে শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীর বেষ্টিত চর ও সংলগ্ন ইউনিয়নগুলোতে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
ক্রমেই নতুন করে বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে জেলার বাকি ৩টি উপজেলা- রাজৈর, কালকিনি ও মাদারীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। জেলায় এ পর্যন্ত ৩৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসত বাড়ি ফসলি জমি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।
মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শিবচরের পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদে গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মাদারীপুর শহর এলাকায় আড়িয়াল খাঁর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ সে.মি. বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে শিবচরের পদ্মা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলের বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত, মাদবরেরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যা ব্যাপক আকার ধরন করেছে। এ ছাড়া নিম্ন কুমার নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বৃদ্ধির ফলে রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর, ইশিবপুর, বদরপাশা ইউনিয়ন ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল, বাহাদুরপুর, শিরখাড়া, ছিলারচর, পাঁচখোলা, কালিকাপুর, খোয়াজপুর, মস্তফাপুর, পেয়ারপুর, ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর, বাঁশগাড়ি, সাহেবরামপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যা কবলিত ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে নদী বাঁধ ও কাঁচাপাকা সড়ক ভেঙে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ সকল এলাকার বসতবাড়ির উঠান তলিয়ে যাওয়াও ঝুঁকির মুখে পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ, ও গৃহপালিত পশু। অন্যদিকে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান হিরু জানান, বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করায় লুন্দি মালেক মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহানা নাসরিন বন্যা কবলিত ইশিবপুর ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্রটিসহ বেশ কয়েকটি পরিদর্শন করেছেন।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাদারীপুর শহরের পাশ দিয়ে আড়িয়াল খাঁর পানি বিপদ সীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, মাদারীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩,৭০০ পরিবার ও নদী ভাঙনে ৯৮২ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫ ইউনিয়ন একটি পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দÖ খোলা হয়েছে ১৮টি। সর্ব মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ হবে প্রায় ৯০ হাজার। বন্যার পানি ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।