ভরা মৌসুমেও ইলিশের তেমন দেখা মিলছে না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীগুলোতে। প্রতিকূল জলবায়ু, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত ও দীর্ঘদিন ধরে নদীবক্ষে জমে থাকা পলির কারণে এমনটা হচ্ছে বলে ধারণা।
হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, এ বছর লকডাউনে দূষণ কম ছিল। বিধিনিষেধের জেরে মাছ ধরাও ছিল বন্ধ। তাই এ বছর প্রচুর ইলিশ মিলবে এমনই ধারণা ছিল। কিন্তু কই? কোথায় গেল সব ইলিশ?
পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার ইলিশ পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যায় ২০১৬ সালে। বর্ষার সময় মাছ যখন প্রজননের তাগিদে সাগর ছেড়ে নদীতে আসে, তখনই ইলিশ মেলে সবচেয়ে বেশি।’
‘কিন্তু অদ্ভুতভাবে এ বছর হাতে এসেছে মাত্র ১০০ টন ইলিশ। যদিও ওপার বাংলায় (বাংলাদেশ) এবারও ইলিশ ভালো ধরা পড়ছে’ যোগ করেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের এক মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা প্রদীপ চ্যাটার্জি বলেন, ‘এমনও হতে পারে, ভারতের নদীতে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়ে ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে গতিপথ বদলে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে।’
এরই মধ্যে ৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করার সময় উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্তে ১২৬ কেজি পদ্মার ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘প্রজননের স্বার্থে প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন নদী-সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এবার লকডাউনের জেরে মার্চের শেষ থেকে বন্ধ ছিল মাছ ধরা। জুন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ভালো ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম এবার ঝাঁকে ঝাঁকে বড় ইলিশ পাওয়া যাবে। কিন্তু হাতে এল ছোট ছোট মাছ, যেগুলোর ওজন এক কেজিরও কম।’
এই পরিস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে প্রতিকূল জলবায়ু, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত ও দীর্ঘদিন ধরে নদীবক্ষে জমে থাকা পলি- এমনই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নদী–মৎস্য বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা ইলিশ বিশেষজ্ঞ উৎপল ভৌমিক বলেন, ‘নদীগর্ভে ৮০-৯০ ফুট গভীরতা পেলেই স্রোতের অভিমুখে যেতে পারে ইলিশ। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমতে থাকায় পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ নদীর গভীরতা এখন এসে দাঁড়িয়েছে ২০-৩০ ফুটে। বর্ষায় ভালো বৃষ্টিপাত হলে গভীরতা খুব বড়জোর ৫০–৬০ ফুট পর্যন্ত হয়। তবে তাতে বিশেষ লাভ হয় না।’
তবে আশা ছাড়েননি শ্যামসুন্দর দাস। তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে। কারণ, বাংলায় ইলিশ মৌসুম অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে যদি ভালো বৃষ্টিপাত হয়, তবে বাঙালির পাতে প্রিয় মাছ পড়ার একটা সম্ভাবনা থাকছেই।’
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.