মাদারীপুর প্রতিনিধি:
বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত জেলা হচ্ছে মাদারীপুর। প্রথম লকডাউনকৃত উপজেলাটিও হচ্ছে মাদারীপুর জেলায়। তাই করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমিত হওয়ার পর থেকেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন জেলা হিসেবে প্রথম থেকে চিহ্নিত হয় মাদারীপুর জেলাটি। সর্বশেষ রেডজোনকৃত ১০টি জেলার মধ্যেও রয়েছে মাদারীপুর জেলা। তাই করোনা পরিস্থিতি অন্যান্য জেলা থেকে প্রথম পর্যায় থেকে মাদারীপুর জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকেও সামাল দিতে হয়েছে কঠিন পরিস্থিতি।
প্রথম থেকেই মাদারীপুর জেলায় করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার ল্যাবে প্রেরণ করা হচ্ছে। প্রথমদিকে আইইডিসিআর এর একটি দল জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করলেও এপ্রিল মাস থেকে মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফলে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ ও তা ল্যাবে প্রেরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ।
নমুনা সংগ্রহ ও প্রেরণের জন্য দরকার মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ প্রয়োজনীয় জনবল। কিন্তু জনবল থাকলেও দেখা দেয় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংকট। ফলে গত ১লা মে থেকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) হিসেবে ৬ জনকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা মাদারীপুর জেলার করোনার কার্যক্রমে স্যাম্পল কালেকশন, পিসিআর ল্যাবে জমা দান এবং গ্রহণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এর ফলে করোনা ভাইরাস নমুনা সংগ্রহের জন্য যে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংকট তা দূর হয় মাদারীপুর জেলায়।
মাদারীপুর জেলায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা ৬ জন হচ্ছেন মাদারীপুর জেলার বাহাদুরপুর গ্রামের গোপাল সরকারের ছেলে প্রসেনজিত সরকার, টিবি কিনিক সড়কের সৈদারবালী গ্রামের মো. হালিম শরীফের ছেলে মাহিদুর রহমান সাইফ, কালকিনি উপজেলার কোলচরী স্বস্থাল গ্রামের মো. মফিজুল ইসলাম ঢালীর মেয়ে আয়শা ইসলাম, ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার বৈদ্যডাঙ্গী গ্রামের প্রমথ চন্দ্র বৈদ্যর ছেলে নারায়ন চন্দ্র বৈদ্য, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বনগ্রামের অমূল্য বালার ছেলে সঞ্জিত বালা এবং একই উপজেলার উত্তর জলিরপাড় গ্রামের যুগল রায়ের ছেলে জুয়েল রায়।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) স্বেচ্ছাসেবক নারায়ন চন্দ্র বৈদ্য জানান, দেশের এই ক্রান্তিকালে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও ল্যাবে প্রেরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। যতদিন করোনা ভাইরাস না যায় ততদিন পর্যন্ত আমি কাজ করে যাবো। মাদারীপুরে যদি পিসিআর ল্যাবও স্থাপন করা হয়, তাতেও আমরা কাজ করতে সক্ষম এবং রাজি রয়েছি।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) স্বেচ্ছাসেবক আয়শা ইসলাম জানান, সারাদেশে আমাদের মতো স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে এমন মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের মধ্যে থেকে সরকার ইতিমধ্যে ১৫৩ জনকে নিয়োগ প্রদান করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত ও লকডাউন করার জেলাটি হচ্ছে মাদারীপুর। কিন্তু মাদারীপুর জেলায় আমরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ৬ জন কাজ করলেও নিয়োগ পাওয়া ১৫৩ জনের মধ্যে আমরা কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের আবেদন আগামীতে যাদের নিয়োগ প্রদান করা হবে আমরা মাদারীপুর জেলার ৬ জনকে সেই নিয়োগে রাখা হয়।
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, করোনার কার্যক্রমে স্যাম্পল কালেকশন, পিসিআর ল্যাবে জমা দান ও গ্রহণের কাজে মাদারীপুরে ছয়জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। তাদেরকে নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সারাদেশে বেশ কিছু মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে নিয়োগ করা হয়েছে। মাদারীপুর জেলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের (ল্যাব) তথ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।