সিরোসিস লিভারের একটি ক্রনিক রোগ, যাতে লিভারের সাধারণ গঠন নষ্ট হয়ে যায়। লিভার হারায় তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা। অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিস থেকে লিভারে ক্যানসারও দেখা দিতে পারে। সিরোসিস আক্রান্ত রোগী বহু বছর পর্যন্ত কোনো ধরনের রোগের লক্ষণ ছাড়াই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। কম্পেনসেটেড বা আর্লি সিরোসিসেও রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অসুবিধা হয় না বললেই চলে। রোগের লক্ষণ আর কষ্টগুলো দেখা দেয় ডি-কম্পেনসেটেড বা অ্যাডভান্সড সিরোসিসে। লক্ষণ কম্পেনসেটেড সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। অনেক সময় রোগীরা দুর্বলতা, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া, পেটের ডান পাশে ব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব, ঘন ঘন পেট খারাপ হওয়া ইত্যাদি সমস্যা অনুভব করতে পারেন। অ্যাডভান্সড সিরোসিসের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। এ সময় পায়ে-পেটে পানি আসে, জন্ডিস হয় এবং রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। রক্তবমি ও পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, ফুসফুসে পানি আসা, কিডনি ফেইলিউর, শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে আন-কন্ট্রোলড ব্লিডিং ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। আর সব চেয়ে যা ভয়াবহ তা হলো, লিভারে দেখা দিতে পারে ক্যানসার। কারণ লিভার সিরোসিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, আর এর ঠিক পরেই রয়েছে ফ্যাটি লিভার। হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস ও অ্যালকোহলের স্থান বাংলাদেশে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস ও ফ্যাটি লিভারের অনেক পরে। ফ্যাটি লিভার নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস, ডিজলিপিডেমিয়া (রক্তে চর্বি বেশি থাকা), ওবেসিটি (মেদ-ভুঁড়ি), উচ্চরক্ত চাপ আর হাইপোথাইরয়ডিজম ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণ। করণীয় সিরোসিসে আক্রান্ত যেকোনো ব্যক্তির উচিত দ্রুত লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নেওয়া ও নিয়মিত ফলোআপে থাকা। এতে দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায়। পাশাপাশি সিরোসিসের কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা গেলে লিভারের খারাপের দিকে যাওয়ার ঝুঁকিও অনেক কমে যায়।
প্রতিকার
মদ্যপান লিভার সিরোসিসের অন্যতম কারণ। তাই এটি থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
অতিরিক্ত ঝাল-মসলাযুক্ত মসলাদার খাবার, জাংক ফুড এড়িয়ে বরং আস্থা রাখুন সবুজ শাকসবজি ও কম তেল-মসলার খাবারে।
কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন শরীরের টক্সিনকে বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন মেন্যুতে কিছুটা কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন রাখুন।
প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষণক্ষম খাবার অর্থাৎ সস, বোতলজাত ফলের রস, কোল্ড ড্রিংকস, বেকারিজাত স্ন্যাক্স এসব যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
ব্যথানাশক ওষুধে ব্যবহৃত নানা যৌগ লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে লিভারের ক্ষতি করে। কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া
ব্যথানাশক ওষুধ খাবেন না।
শারীরিক শ্রম শরীরে মেদ জমতে দেয় না। ফলে লিভারে ফ্যাট জমে না ও লিভার সুস্থ থাকে।
শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পানের অভ্যাস করুন। পানি টক্সিন সরিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। যেহেতু আর্লি সিরোসিসে তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না বললেই চলে, তাই রোগী আর চিকিৎসকের সচেতনতাটা এ ক্ষেত্রে জরুরি। প্রয়োজন প্রাথমিক পর্যায়ে সিরোসিসের রোগীকে শনাক্ত করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মেহেদী হাসান
Copyright © 2024 Livenews24. All rights reserved.